অমিতোষ পাল :
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে (বেলকুচি-চৌহালী-কামারখন্দের আংশিক) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডলের কাছে তিনি হেরে যান। মমিন মণ্ডল ভোট পান ৭৭ হাজার ৪২২ আর লতিফ বিশ্বাস পান ৭৩ হাজার ১৮৩। অতীতে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন। একবার এমপি পদে জয়ী হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রীরও দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এবার নির্বাচনে হেরে তিনি দু’কূলই হারিয়েছেন।
শুধু লতিফ বিশ্বাসই নন, এ রকম ৪১ পদত্যাগী গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি এমপি হতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন; আম-ছালা দুটিই হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে, জেলা পরিষদের সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়রও রয়েছেন। অবশ্য ২০ পদত্যাগী জনপ্রতিনিধি এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি হয়ে সংসদেও যাচ্ছেন।
আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘জনগণ আমাকে ঠিকই ভোট দিয়েছে। আমি ডিক্লিয়ারে (ঘোষণায়) মাইর খাইছি। সে (মমিন মণ্ডল) শিল্পপতি তো। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চলাফেরা করে। একটা সিস্টেম করছে। আল্লাহ এটা দেখছে। আল্লাহ এর বিচার করবে।’
ঢাকার ধামরাইয়ের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে ঢাকা-২০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন মোহাদ্দেছ হোসেন, তিনিও হেরেছেন। জয়ী আওয়ামী লীগের বেনজীর আহমদ ভোট পান ৮৩ হাজার ৭০৯। মোহাদ্দেছ হোসেন পান ৫৪ হাজার ৬১৩। এ বিষয়ে মোহাদ্দেছ হোসেন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে রূপগঞ্জের পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়া শাজাহান ভূঁইয়া সমকালকে জানান, নির্বাচনের দিন দুপুরের পর তাঁর সব এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এর পর একতরফা নির্বাচন হয়। আগামী মে মাস পর্যন্ত রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মেয়াদ আছে। এই কয়েক মাসের জন্য হয়তো নির্বাচন আর হবে না। পরবর্তী সময়ে তিনি আর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন না।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য পদত্যাগকারীদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ৫২ জন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চারজন, জেলা পরিষদের সদস্য একজন এবং পৌর মেয়র ছিলেন চারজন। তাদের মধ্যে কয়েকজন দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেলেও বেশির ভাগই মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। বিভিন্ন কারণে ১৭ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়। কয়েকজন আবার পদত্যাগ করলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেননি। যারা পদত্যাগ করেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে দলীয় কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তারা প্রার্থী হয়েছিলেন। জয়ী হতে না পারলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, পদত্যাগ করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একজন, পৌর মেয়র তিনজন ও উপজেলা চেয়ারম্যান ১৬ জন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা আটজনের মধ্যে সাতজনই জয়ী হয়েছেন। তারা হলেন– মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদ, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এস এম আতাউল হক, চট্টগ্রাম-১২ আসনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৪ আসনে এস এম আল মামুন, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে শফিকুল ইসলাম, শেরপুর-৩ আসনে এ ডি এম শহিদুল ইসলাম এবং বগুড়া-৫ আসনে মজিবুর রহমান মজনু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন আরও ৯ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া পদত্যাগী মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। তিনি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে (নৌকা) হারিয়ে দেন। ময়মনসিংহ-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোসলেম উদ্দিনকে হারিয়ে দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলবাড়িয়া উপজেলার পদত্যাগী চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে লালমনিরহাট জেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মতিয়ার রহমান লালমনিরহাট-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়েছেন। পদত্যাগী মেয়রদের মধ্যে জয়ী হয়েছেন রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি রাজশাহী-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মোহাম্মদ ফয়সাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। ময়মনসিংহ-৭ আসনে এ বি এম আনিছুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-